আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর-পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’-এ বিশ্বসেরার মুকুট অর্জন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার হাফেজ মোহাম্মদ জাকি। দেশসেরা হয়েছেন নেত্রকোনার কিশোর হাফেজ মো. ইরশাদুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেরা তিনজন এবং জাতীয় পর্যায়ে আটজন এই পুরস্কার পান। গতকাল শনিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার নবরাত্রি হলে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এ সময় দেশবরেণ্য আলেম-ওলামা, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক ও হাফেজরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। অনুষ্ঠানের শুরুতে এই যুগান্তকারী আয়োজনের প্রধান কাণ্ডারি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং কুরআনের নূরের স্বপ্নদ্রষ্টা বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রধান আকর্ষণ ছিল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের হাফেজরা এতে অংশ নেন। আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন ইন্দোনেশিয়ার মোহাম্মদ জাকি ১৫ লাখ টাকা, প্রথম রানারআপ ইয়েমেনের মোহাম্মদ বালিগ সায়্যিদ আব্দুল গাফফার আলী ১০ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় রানারআপ বাংলাদেশের মো. ইরশাদুল ইসলাম সাত লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। ইরশাদের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে তিনি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।
সারা দেশে ১১টি জোনে অন্তত ১০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এই গৌরব অর্জন করেন ইরশাদুল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে মো. জিহাদুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান বিন নূর। এ ছাড়া চতুর্থ স্থানে মো. জুবায়ের আহমদ, পঞ্চম মো. শাহেদ আলম তারিফ, ষষ্ঠ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সপ্তম মুহাম্মদ আফফান বিন সিরাজ এবং অষ্টম হন আব্দুর রাজ্জাক নোমান।
জাতীয় ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ১০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার সাত লাখ টাকা, তৃতীয় পুরস্কার পাঁচ লাখ টাকা, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার দুই লাখ টাকা এবং বাকি তিনটি পুরস্কারের মূল্যমান এক লাখ টাকা। প্রত্যেক বিজয়ীকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রথম আসরের মতো এবারও মা-বাবাসহ বিজয়ীদের ওমরাহ পালনের সুযোগ করে দেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হজরত মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আল কুরআনকে মানুষ ও সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্য যে যতটুকু ভূমিকা রাখবে সে ততটুকু মোবারকবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। সমাজ ও দেশের মানুষের কাছে কুরআনকে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সহযোগিতায় দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য তাঁদের মোবারকবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রতিযোগিতা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখায় বিচারকমণ্ডলীসহ সবাইকে সাধুবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, কুরআনকে সমাজের সামনে তুলে ধরতে বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ চলমান থাকুক। উত্তম কাজের প্রতিদান হিসাবে আল্লাহ পাক আয়োজকদের দুনিয়া ও আখিরাতে পুরস্কৃত করুক।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হজরতুল আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দিক বিল্লাহ মাদানী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলার ঘরে ঘরে কুরআনের নূর পৌঁছে দিতে চাই। দেশের খুদে হাফেজরা সৌদি আরব, কাতার, মিসরসহ বিশ্বের বিভিন্ন কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশের জন্য সুনাম ও গৌরব বয়ে এনেছেন।’
তিনি বলেন, ‘অনর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি মালয়েশিয়ার মতো প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেখানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেও কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়।’
অনুষ্ঠানে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আল কুরআন হচ্ছে মানবতার মুক্তির দিশা। এটি মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইসলামিয়া আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, ‘শুধু হেফজ শেষ করলেই চলবে না। কুরআনকে আমাদের বাস্তবিক জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস হজরতুল আল্লামা মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, ‘আমরা যত বেশি কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করব, তত বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করব। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডির বদৌলতে দেশে আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আল্লাহ তাঁদের উত্তম প্রতিদান প্রদান করুক।’ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হজরতুল আল্লামা ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, কুরআন গোটা মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেখায়।
অনুষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর গুলজার আহমেদ বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সহযোগিতায় দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও একই ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি। মাওলানা ড. সৈয়দ মাবরুক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, কুরআনে হাফেজ হওয়া সাধারণ কোনো বিষয় না।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি উস্তাদুল হুফফাজ হাফেজ কারি শায়খ আব্দুল হক, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সম্মানিত চারজন পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান, শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী আন নদভী, শায়খুল হাদিস মুফতি এহসানুল হক জিলানী, শায়খুল হাদিস মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম, কুরআনের নূর অনুষ্ঠানের চিফ কো-অর্ডিনেটর হায়দার আলী, ডেপুটি চিফ কো-অর্ডিনেটর আশিকুর রহমান শ্রাবণ, কো-অর্ডিনেটর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী, মিজানুর রহমান মানিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ইসলামী সংগীতশিল্পী বদরুজ্জামান উজ্জ্বল। পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বিশ্ববিখ্যাত গুণী হাফেজদের মধ্যে হাফেজ মোহাম্মদ জাকি, হাফেজ আব্দুর রহমান বিন নূর, হাফেজ মো. জুবায়ের আহমদ।
বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে কুরআনের নূর প্রতিযোগিতার সূচনা হয় ২০২৩ সালে। প্রথম আসরের সফলতা ধরে রেখে পরের বছর আরো বৃহৎ আকারে আয়োজন করা হয় এই প্রতিযোগিতা। বৃদ্ধি পায় পুরস্কারের অর্থমূল্যও। গত বছরের ২৪ নভেম্বর সিলেট জোনের অডিশন দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় আসর। পবিত্র রমজানে ইফতারের আগে নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের পর্দায় প্রতিযোগিতাটি সম্প্রচার করা হয়েছিল। হাজার হাজার খুদে হাফেজ এবং তাঁদের অভিভাবকদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছিল প্রতিটি বিভাগের অডিশন। জাতীয় পর্যায় শেষে শুরু হয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। তুরস্ক, জর্দান, ওমান, ইয়েমেন, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৭টি দেশের হাফেজরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরাও ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী।
SOURCE : কালের কণ্ঠসৈয়দপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে গাছের চারা রোপণ
Tree Plantation Initiative by Bashundhara Shuvosangho in Saidpur
উপকূলের অসহায় নারীদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ
Bashundhara Group Stands by Vulnerable Women on the Coast
বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে উপকূলীয় দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন প্রদান
Bashundhara Group Provides Training and Sewing Machines to Poor Coastal Women
৫৩ লাখ টাকার সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের
Bashundhara Foundation Distributes Tk 5.3 Million in Interest-Free Loans
বসুন্ধরা গ্রুপের শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছে জাবির ১১৬ জন শিক্ষার্থী
Bashundhara Group Supports 116 JU Students with Scholarships